Saturday, July 23, 2011

চির অনাবৃতা হে নগ্নতমা

নির্মলেন্দু গুণ
................
চির অনাবৃতা হে নগ্নতমা
নদীর জল তোমাকে যেভাবে পেয়েছে
আমি সেভাবে পাই নি!

লাক্স সাবান যেভাবে তোমাকে ছুঁয়েছে
আমি সেভাবে ছুঁইনি।
মেডলিন লিপস্টিক যেভাবে তোমাকে চুমু খেয়েছে
আমি সে সুযোগ পাই নি।

প্রসাধন ঘরের চারদেয়াল তোমাকে যেভাবে দেখেছে
আমি সেভাবে তোমাকে দেখিনি।
গাঢ় অন্ধকার যেভাবে তোমাকে আলিঙ্গন করেছে
আমি তো তা পারি নি।

দিনের আলো যেভাবে তোমাকে দূরে সরিয়েছে
আমি সে প্রশ্রয় পাই নি
বেসিনের জল যেভাবে তোমার হাত ধরেছে
আমি সে সুযোগও পাই নি

তোমার হাতের বই বুক পর্যন্ত যেভাবে গড়িয়েছে
দেখে তো আমার ঈর্ষাই হয়েছে
এভাবে স্পর্শকাতর কবি ঈর্ষাকাতর হয়েছে
করেছে ভ্রমণ স্বপ্নের ভিতর
ঘুরেছে ঘোরে ঘোর ঘোরতর।

ম্যাক্সির ভিতর যেভাবে তুমি ঢুকেছো
আমার আলিঙ্গনে সেভাবে তুমি আসো নি
রাতের আকাশ যেভাবে তোমাকে দেখেছে
বৃষ্টির জল যেভাবে তোমাকে জড়িয়েছে
দিনের সূর্য যে উত্তাপ তোমাকে দিয়েছে
তোমার শরীরে পৃথিবীর পরে
আমি সে সুযোগ পাই নি।

ভোরের বায়ু তোমার এলায়িত চুলে
যেভাবে হাত বুলিয়েছে
এই কবি কি সে সুযোগ পেয়েছে?
ভিনদেশী পারফিউম তোমার গাঁয়ে যেভাবে গন্ধ মেখেছে
এই কবি কি তা পেরেছে?

Wednesday, July 20, 2011

ফেসবুক গ্রুপে আমন্ত্রণ

প্রিয় ভিজিটর, আপনাকে ফেসবুক গ্রুপে আমন্ত্রণ জানাই। ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিতে এখানে ক্লিক করুন কবিতার খাতা

Tuesday, July 19, 2011

তোমাকে

জীবনানন্দ দাস
............
মাঠের ভিড়ে গাছের ফাঁকে দিনের রৌদ্রে অই;
কুলবধুর বহিরাশ্রয়িতার মতন অনেক উড়ে
হিজল গাছে জামের বনে হলুদপাখির মতো
রূপসাগরের পার থেকে কি পাখনা বাড়িয়ে
বাস্তবিকই রৌদ্র এখন? সত্যিকারের পাখি?
কে যে কোথায় কার হৃদয়ে কখন আঘাত ক’রে।
রৌদ্রবরণ দেখেছিলাম কঠিন সময়-পরিক্রমার পথে-
নারীর,-তবু ভেবেছিলাম বহিঃপ্রকৃতির।
আজকে সে-সব মীনকেতনের সাড়ার মতো, তবু
অন্ধকারের মহাসনাতনের থেকে চেয়ে
আশ্বিনের এই শীত স্বাভাবিক ভোরের বেলা হ’লে
বলেঃ ‘আমি রোদ কি ধূলো পাখি না সেই নারী?’
পাতা পাথর মৃত্যু কাজের ভূকন্দরের থেকে আমি শুনি;
নদী শিশির পাখি বাতাস কথা ব;লে ফুরিয়ে গেলে পরে
শান্ত পরিচ্ছন্নতা এক এই পৃথিবীর প্রাণে
সফল হ’তে গিয়েও তবু বিষণ্নতার মতো।
যদিও পথ আছে-তবু কোলাহলে শূন্য আলিঙ্গনে
নায়ক সাধক রাষ্ট্র সমাজ ক্লান্ত হয়ে পড়ে;
প্রতিটি প্রাণ অন্ধকারে নিজের আত্মবোধের দ্বীপের মতো-
কী বিরাট অবক্ষয়ের মানব-সাগরে।
তবুও তোমায় জেনেছি, নারী, ইতিহাসের শেষে এসেঃ মানবপ্রতিভার
রূঢ়তা ও নিষ্ফলতার অধম অন্ধকারে।
মানবকে নয়, নারি, শুধু তোমাকে ভালোবেসে
বুঝেছি নিখিল বিষ কী রকম মধুর হতে পারে।

Monday, July 11, 2011

স্বভাব

জীবনানন্দ দাস
.........
যদিও আমার চোখে ঢের নদী ছিলো একদিন
পুনরায় আমাদের দেশে ভোর হ'লে,
তবুও একটি নদী দেখা যেতো শুধু তারপর;
কেবল একটি নারী কুয়াশা ফুরোলে
নদীর রেখার পার লক্ষ্য ক'রে চলে;
সূর্যের সমস্ত গোল সোনার ভিতরে
মানুষের শরীরের স্থিরতর মর্যাদার মতো
তার সেই মূর্তি এসে পড়ে।
সূর্যের সম্পূর্ণ বড় বিভোর পরিধি
যেন তার নিজের জিনিস।
এতদিন পরে সেইসব ফিরে পেতে
সময়ের কাছে যদি করি সুপারিশ
তা'হলে সে স্মৃতি দেবে সহিষ্ণু আলোয়
দু-একটি হেমন্তের রাত্রির প্রথম প্রহরে;
যদিও লক্ষ লোক পৃথিবীতে আজ
আচ্ছন্ন মাছির মত মরে -
তবুও একটি নারী 'ভোরের নদীর
জলের ভিতরে জল চিরদিন সূর্যের আলোয় গড়াবে'
এ রকম দু-চারটে ভয়াবহ স্বাভাবিক কথা
ভেবে শেষ হ'য়ে গেছে একদিন সাধারণভাবে।

লোকেন বোসের জর্নাল

জীবনানন্দ দাশে
..............
সুজাতাকে ভালোবাসতাম আমি —
এখনো কি ভালোবাসি?
সেটা অবসরে ভাববার কথা,
অবসর তবু নেই;
তবু একদিন হেমন্ত এলে অবকাশ পাওয়া যাবে
এখন শেলফে চার্বাক ফ্রয়েড প্লেটো পাভলভ ভাবে
সুজাতাকে আমি ভালোবাসি কি না।

পুরোনো চিঠির ফাইল কিছু আছে:
সুজাতা লিখেছে আমার কাছে,
বারো তেরো কুড়ি বছর আগের সে-সব কথা;
ফাইল নাড়া কি যে মিহি কেরানীর কাজ;
নাড়বো না আমি
নেড়ে কার কি লাভ;
মনে হয় অমিতা সেনের সাথে সুবলের ভাব,
সুবলেরই শুধু? অবশ্য আমি তাকে
মানে এই — অমিতা বলছি যাকে —
কিন্তু কথাটা থাক;
কিন্তু তবুও —
আজকে হৃদয় পথিক নয়তো আর,
নারী যদি মৃগতৃষ্ণার মতো — তবে
এখন কি করে মন কারভান হবে।

প্রৌঢ় হৃদয়, তুমি
সেই সব মৃগতৃষ্ণিকাতলে ঈষৼ সিমুমে
হয়তো কখনো বৈতাল মরুভুমি,
হৃদয়, হৃদয় তুমি!
তারপর তুমি নিজের ভিতরে ফিরে এসে তব চুপে
মরীচিকা জয় করেছো বিনয়ী যে ভীষন নামরূপে
সেখানে বালির সৼ নিরবতা ধূ ধূ
প্রেম নয় তবু প্রমেরই মতন শুধু।
অমিতা সেনকে সুবল কি ভালোবাসে?
অমিতা নিজে কি তাকে?
অবসর মতো কথা ভাবা যাবে,
ঢের অবসর চাই;
দূর ব্রহ্মাণ্ডকে তিলে টেনে এনে সমাহিত হওয়া চাই
এখনি টেনিসে যেতে হবে তবু,
ফিরে এসে রাতে ক্লাবে;
কখন সময় হবে।

হেমন্তে ঘাসে নীল ফুল ফোঁটে —
হৃদয় কেন যে কাঁপে,
'ভালোবাসতাম' — স্মৃতি — অঙ্গার — পাপে
তর্কিত কেন রয়েছে বর্তমান।
সে-ও কি আমায় — সুজাতা আমায় ভালোবেসে ফেলেছিলো?
আজো ভালোবাসে নাকি?
ইলেকট্রনেরা নিজ দোষগুনে বলয়িত হয়ে রবে;
কোনো অন্তিম ক্ষালিত আকাশে
এর উত্তর হবে?

সুজাতা এখন ভুবনেশ্বরে;
অমিতা কি মিহিজামে?
বহুদিন থেকে ঠিকানা না জেনে ভালোই হয়েছে — সবই।
ঘাসের ভিতরে নীল শাদা ফুল ফোটে হেমন্তরাগে;
সময়ের এই স্থির এক দিক,
তবু স্থিরতর নয়;
প্রতিটি দিনের নতুন জীবাণু আবার স্থাপিত হয়।

Pages