Tuesday, September 11, 2012

তাসের প্রাসাদ

কবি: জাফর সাদেক চৌধুরী।
......................................

রমনার বিকেল আলোয় মেলতো ডানা
স্বপ্ন নিয়ে উড়তো তারা নেইতো মানা।
একযুগলের দেখা হোতো বিকেল বেলা,
সেই যুগলের হৃদয় জুড়ে স্বপ্ন খেলা।

নাগলিঙ্গম গাছের নিচে বসতো দু’জন
নগরজুড়ে মিলতো অবাক পাখির কূজন।
গুনতো শুধু কখন হবে আঁধার কালো,

সেই আঁধারে সুখের মেলা জমতো ভালো।

অপাংক্তেয়-পল্লী যেমন কারো জীবন,
বিনা পাপে খুঁজতো তারা উষ্ণ মিলন।
সেই মিলনে কাম ছিলনা মরণ নেশা,
সিক্ত হতো প্রেমের নদী ভালোবাসা।
ভালোবাসার মাঝে অনেক স্বপ্নবাজি,
ঘর বানাবে সাজবে অনেক পুষ্পরাজি।

তারপর এক তাসের মতো প্রাসাদ হোলো,
প্রাসাদ-জীবন ভালোবাসা মলিন হোলো।
সেই জীবনে একটুখানি হিসাব-নিকাশ,
সেই হিসাবে হঠাৎ কেমন আঁধার আকাশ।
আঁধার আকাশ জুড়ে কালো মেঘের মেলা,
সেই মেলাতে হারিয়ে গেল বিকেল বেলা।
তাসের প্রাসাদ ধ্বংস হোলো ছেলেখেলায়,
দু’জন ভাবে দুই নগরে বিকেল বেলায় ।

নষ্ট ঘড়ির অচল বেলা

কবি: জাফর সাদেক চৌধুরী
..............................................
 এক শহরের এক কোণেতে রৌদ্র দুপুর
পাখির ডাকের শেওলা দেয়াল হারিয়ে গেল
হঠাত করে তরতরিয়ে চিলেকোঠার চড়ইপাখি
অবুঝমনে স্বপ্ন জালে সেই দেয়ালের সঙ্গী হল।

সেই শহরের প্রাণের ছোঁয়া কিশোরমেলা
চঞ্চলতার ঘুড়ি ফেলে বিকেল আলোয়
পথ ভুলে আজ ঘরের কোণে সঙ্গীহারা

সবুজ ছেড়ে নষ্ট খেলা আঁধার কালোয় ।

মানুষগুলো সাহসহারা আজব জীবন
সেই জীবনের ভাঁজে ভাজে কষ্ট ছায়া
সময় গুলো নষ্ট ঘড়ির অচল বেলা
সবই করে ভুলছে শুধু মাটির মায়া।

স্বার্থ চেনা সেই সময়ের সঙ্গী হলাম
সবুজ বাদাড় পাহাড় কেটে ঘর বনালাম
নিজের মতো মরা দ্বীপের ছবি এঁকে
আপনমনে অতীত ভুলে ঘর সাজালাম।

সেই শহরের স্রোতস্বিনী খুন হয়েছে
আমার হাতে দিন দুপুরে দেখল সবাই
কী যায় তাতে কেউ কাঁদে না
কাজ ভুলে সব নষ্ট ছবি করছে বাঁধাই।

রক্তের সুতোয় ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল

কবি: জাফর সাদেক চৌধুরী
....................................
 চোখে দেখা লাগে না শব্দস্রোতে যায় চেনা
কণ্ঠ নিঃসৃত প্রতিটি শব্দ কনার কম্পনাঙ্ক
প্রেমিকের হৃদয়ে জন্ম দিত চেতনার প্রজ্বলন
লাঠি হাতে ট্যাঙ্কের সামনে যাওয়ার অদম্যতা।

প্রতিটি শব্দ কনিকা ছিল বিদ্যুতের স্ফুলিঙ্গের মতো
তীব্র ধাবমান অজানা গ্যালাক্সির ক্ষিপ্র নভোযান
দিগন্ত ছিন্ন করা লক্ষ আলোকবর্ষ দৈর্ঘ্যের এক মুক্ত স্বপ্ন

জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলা ।

জয় বাংলা কোনো শব্দ নয় একটি দীক্ষা
এই দীক্ষাতে সুপ্ত ছিল পশুদের হননের মন্ত্র
যেই মন্ত্র নিজে রক্তাক্ত হয়ে ছিন্ন করে শত্রুর মস্তক
সেই মন্ত্রে ৩২ লক্ষ দীপ জ্বলে উঠে ১৫ কোটি চোখে।

এক তর্জনীর গর্জনে কোটি জীবন ছুটে মৃত্যুর পানে
লক্ষ জীবন স্বপ্ন মায়ায় বিবর্তিত হয়ে এক সাগর রক্ত
রক্তের সুতোয় ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল মায়ের আঁচল
মায়ের আঁচলে পরম মমতায় আঁকা হল বাংলাদেশ।

Wednesday, January 18, 2012

রিপোর্ট ১৯৭১ আসাদ চৌধুরী

প্রাচ্যের গানের মতো শোকাহত, কম্পিত, চঞ্চল
বেগবতী তটিনীর মতো স্নিগ্ধ, মনোরম
আমাদের নারীদের কথা বলি, শোনো।
এ-সব রহস্যময়ী রমণীরা পুরুষের কণ্ঠস্বর শুনে
বৃক্ষের আড়ালে স’রে যায়-
বেড়ার ফোঁকড় দিয়ে নিজের রন্ধনে
তৃপ্ত অতিথির প্রসন্ন ভোজন দেখে
শুধু মুখ টিপে হাসে।
প্রথম পোয়াতী লজ্জায় অনন্ত হ’য়ে
কোঁচরে ভরেন অনুজের সংগৃহীত কাঁচা আম, পেয়ারা, চালিতা-
সূর্য্যকেও পর্দা করে এ-সব রমণী।
অথচ যোহরা ছিলো নির্মম শিকার
সকৃতজ্ঞ লম্পটেরা
সঙ্গীনের সুতীব্র চুম্বন গেঁথে গেছে-
আমি তার সুরকার- তার রক্তে স্বরলিপি লিখি।

মরিয়ম, যীশুর জননী নয় অবুঝ কিশোরী
গরীবের চৌমুহনী বেথেলহেম নয়
মগরেবের নামাজের শেষে মায়ে-ঝিয়ে
খোদার কালামে শান্তি খুঁজেছিলো,
অস্ফুট গোলাপ-কলি লহুতে রঞ্জিত হ’লে
কার কী বা আসে যায়।
বিপন্ন বিস্ময়ে কোরানের বাঁকা-বাঁকা পবিত্র হরফ
বোবা হ’য়ে চেয়ে দ্যাখে লম্পটের ক্ষুধা,
মায়ের স্নেহার্ত দেহ ঢেকে রাখে পশুদের পাপ।
পোষা বেড়ালের বাচ্চা চেয়ে-চেয়ে নিবিড় আদর
সারারাত কেঁদেছিলো তাহাদের লাশের ওপর।

এদেশে যে ঈশ্বর আছেন তিনি নাকি
অন্ধ আর বোবা
এই ব’লে তিন কোটি মহিলারা বেচারাকে গালাগালি করে।

আসাদ চৌধুরী
..................
জনাব ফ্রয়েড,
এমন কি খোয়াবেও প্রেমিকারা আসে না সহজ পায়ে চপল চরণে।
জনাব ফ্রয়েড, মহিলারা
কামুকের, প্রেমিকের, শৃঙ্গারের সংজ্ঞা ভুলে গ্যাছে।
রকেটের প্রেমে পড়ে ঝ’রে গ্যাছে
ভিক্টোরিয়া পার্কের গীর্জার ঘড়ি,
মুসল্লীর সেজদায় আনত মাথা
নিরপেক্ষ বুলেটের অন্তিম আজানে স্থবির হয়েছে।
বুদ্ধের ক্ষমার মূর্তি ভাঁড়ের মতন
ভ্যাবাচেকা খেয়ে প’ড়ে আছে, তাঁর
মাথার ওপরে
এক ডজন শকুন মৈত্রী মৈত্রী ক’রে
হয়তো বা উঠেছিলো কেঁদে।

Pages